ইংরেজি মাস ও বারের নামকরণ করা হলো কীভাবে?

ক্যালেন্ডার আবিষ্কারের ইতিহাস সভ্যতার ইতিহাসের মতোই পুরোনো। অন্তত: পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ ক্যালেন্ডারের ব্যবহার শিখেছিল। প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীতে সৌর ও চান্দ্র বছরের হিসেব প্রচলিত আছে। এই দুই বছরের দিনসংখ্যা এমনকি মাসের দিনসংখ্যারও পার্থক্য দেখা যায়। প্রাচীন ক্যালেন্ডারগুলো নির্ভুল ছিল না এবং অনেক ক্যালেন্ডারই লিখিত আকারে আজকের দিনের মতো ছিল না। ছক কেটে যেভাবে এখন ক্যালেন্ডারে দিনের হিসেব দেখানো হয়, সেভাবে আগেকার ক্যালেন্ডারে দেখানো হতো না। বহু ক্যালেন্ডারই ছিল মৌখিক। 

ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দের দিকে ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জী প্রচলিত ছিল। প্রাচীন মিশরের লোকেরা নীলনদের বন্যা দেখে বছরের হিসেব করত। সেই বছরের দিনসংখ্যা ছিল ৩৬৫। প্রায় সমসাময়িককালের মেসোপটেমিয় সভ্যতার মানুষেরাও ক্যালেন্ডারের ব্যবহার জানত। রোমান সভ্যতার আমলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আদি রূপটি প্রথমবারের মতো উদ্ভাবিত হয়েছিল। এই ক্যালেন্ডারের পরিবর্তিত রূপটি এখন সারাবিশ্বে প্রচলিত আছে।  রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। রোমানদের হাতে ক্যালেন্ডারের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে বলে বারো মাসের বেশিরভাগ মাসের নামকরণ করা হয়েছে রোমান সম্রাট ও দেবতাদের নামানুসারে। 

মাসের নামকরণ : 

  • জানুয়ারি : রোমান দেবতা ‘জানুস’ এর নামানুসারে এই মাসের নাম রাখা হয় জানুয়ারি। জানুস অর্থ হলো ‘দুটি মুখ’। যার একটি মুখ পেছনের দিকে এবং আরেকটি মুখ সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ তিনি পিছন বা অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে বা ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করছেন। নববর্ষের প্রথম দিনটিও অতীত ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন ঘটায়।
  • ফেব্রুয়ারি : ফেব্রুয়ারি এসেছে ‘ফেব্রুয়া’ থেকে, এর অর্থ হলো পবিত্র।
  • মার্চ : রোমান যুদ্ধদেবতা মার্সিয়াস বা মরিসের নামানুসারে এই মাসের নাম মার্চ।
  • এপ্রিল : ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ থেকে এসেছে এপ্রিল, যার অর্থ খুলে দেওয়া। এপ্রিল মাসে যেহেতু বসন্তের দ্বার খুলে যায়, তাই এমন নাম। কেউ কেউ মনে করেন গ্রিক শব্দ ‘এপ্রিনিস মাইসা’ থেকে এসেছে এপ্রিল শব্দটি। আবার অনেকে মনে করেন দেবি আফ্রোদিতির নাম থেকেই এসেছে এপ্রিল।
  • মে : রোমান আলোকদেবী ‘মেইয়ার’ এর নামানুসারে নাম রাখা হয় মে।
  • জুন : ‘জুনো’ নামের রোমানদের একজন নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন। তাঁর নামেই জুনের উৎপত্তি।
  • জুলাই : রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে এই মাসের নাম জুলাই।
  • অগাস্ট : অগাস্টাস সিজার নামে জুলিয়াস সিজারের এক পুত্র ছিল। সেখান থেকেই এসেছে অগাস্ট নামটি।
  • সেপ্টেম্বর : ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বর অর্থ হলো ৭। কিন্তু বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসটি হলো ৯ নম্বর মাস। অবশ্য এটা আর পরে পালটানো হয়নি৷
  • অক্টোবর : অক্টোবর শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ৮ থেকে।
  • নভেম্বর : ‘নভেম’ অর্থ ৯। যদিও বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটি এখন ১১ নাম্বার মাস।
  • ডিসেম্বর : ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম্বর’ অর্থ হলো ১০। যদিও বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটি এখন ১২ নাম্বার মাস।    

দিনের নামকরণ :

  • Saturday বা শনিবার : রোমান সাম্রাজ্যের লোকেরা বিশ্বাস করতো, ‘স্যাটান’ নামের চাষানাদের জন্য একজন দেবতা আছেন। তাঁর হাতেই নাকি আবহাওয়া ভালো-খারাপ করার শক্তি আছে৷ তাই তাঁর সম্মানে তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন ‘স্যাটনি ডেইজ’। সেখান থেকেই আসে Saturday।    
  • Sunday বা রবিবার : অনেক অনেক দিন আগের কথা। আগেকার দিনের দক্ষিণ ইউরোপের বাসিন্দারা বিশ্বাস করতো একজন দেবতা রয়েছেন, যিনি শুধু আকাশে গোলাকার আলোর বল আঁকেন। আর ল্যাটিন ভাষায় তাঁর নাম হলো ‘সলিছ’। তারা তাঁকে ডাকতো ‘সলিছ ডে’ বলে। তবে উত্তর ইউরোপের বাসিন্দারা তাঁকে ‘স্যানাল ডেইজ’ নামে ডাকতো। সেখান থেকেই Sunday শব্দটির উৎপত্তি।
  • Monday বা সোমবার : রাতের বেলার আকাশের গায়ে রূপালী বল দেখে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা একে ডাকতো ‘লুনা’ বলে। এটিও একটি ল্যাটিন শব্দ৷ তবে উত্তর ইউরোপের মানুষরা একে ডাকতো ‘মোনান ডেইজ’।  সেখান থেকেই এসেছে Monday
  • Tuesday বা মঙ্গলবার :  আগেরকার দিনে রোমানরা বিশ্বাস করতো, টিউ নামে তাদের একজন দেবতা আছে, যিনি কিনা যুদ্ধ দেখাশোনা করেন৷ তাদের মতে, যারা টিউকে মেনে চলতো তাদেরকে টিউ যুদ্ধের ময়দানে সাহায্য করতো। আর যারা পরলোকগমন করেছে, তাদের বিশ্রামের জায়গা করে দিতে টিউ একদল মহিলাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসতো। তারা একে ‘ডুইস’ বলে ডাকতো। সেই থেকে এসেছে Tuesday।
  • Wednesday বা বুধবার : দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ভাবতো, দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলে ‘উডেন’। একবার তিনি জ্ঞান আহরণ করতে যেয়ে নিজের এক চোখ হারান। সেই চোখটি তিনি তাঁর লম্বা টুপি দিয়ে ঢেকে রাখতেন। তাঁর আবার ছিল দুইটি পাখি, যারা তাঁর গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো। সেই পাখি দুইটা সারারাত পুরো পৃথিবীর ঘটনাবলী উডেনকে শোনাতো। এভাবেই উডেন পুরো পৃথিবীর খোঁজখবর রাখতো৷ এইজন্য লোকেরা বলতে ওয়েডনেস ডেইস। সেই থেকে এসেছে Wednesday।
  • Thursday বা বুধবার : আগে মানুষ মনে করতো, বিদ্যুৎ চমকানো ও বজ্রপাতের পেছনে রয়েছে ‘থর’ নামের এক দেবতা৷ তাদের মতে থর যখন রাগান্বিত হন, তখন তিনি তাঁর ছাগলের গাড়িতে বসে আকাশের দিকে তাঁর হাতুড়ি নিক্ষেপ করেন। ছাগলের গাড়ির চাকার শব্দ হচ্ছে বজ্রপাত ও হাতুড়ির আঘাতে সৃষ্ট শব্দটি হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ। থরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন ‘থার্স ডেইস’। সেই থেকে এসেছে Thursday।
  • Friday বা শুক্রবার : পুরাণমতে, ওডিন নামের একজন দেবতা ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন ফ্রিগ৷ তিনি ছিলেন প্রকৃতি, ভালোবাসা ও বিবাহের দেবী। ওডিনের পাশে সবসময় তাঁর স্ত্রী ফ্রিগ থাকতেন। তাঁরা একসাথে পৃথিবীকে দেখতেন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ কর‍তেন। তাই সপ্তাহের একদিনের নাম রাখা হয় ‘ফ্রিগ ডেইজ’। সেখান থেকেই এসেছে ‘ফ্রাইডে’।


পূর্ববর্তী পোস্ট পরবর্তী পোস্ট

Contact Form